সন্দেহবশতঃ স্বামীকে খুন করে রান্নাঘরে স্লাবের নিচে দেহ পুঁতে রেখে রান্নাবান্না করে দিব্যি সংসার করছিলেন স্ত্রী । তার মনে সন্দেহ হয়েছিল যে আইনজীবী স্বামীর সঙ্গে তার ভাইয়ের বউয়ের অবৈধ সর্ম্পক রয়েছে । কিন্ত শেষ রক্ষা হল না পুলিশের কাছে ধরা পড়ে ওই মহিলা এখন জেলে ।
ঘটনার সূত্রপাত মাসখানেক আগে। পুলিশ সূত্রে খবর, মধ্যপ্রদেশে অনুপ্পুর জেলার কারোন্ডি গ্রামের বাসিন্দা মহেশ বানওয়াল (৩৫) নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী প্রমিলা (৩২)। তদন্তে পুলিশ কার্যত কোনও সূত্রই খুঁজে পায়নি। কিন্তু ২১ নভেম্বর ঘটনা মোড় নেয় অন্য দিকে। ওই দিন থানায় গিয়ে মহেশের দাদা জানান, নিখোঁজের ঘটনায় মহেশের স্ত্রীর হাত থাকতে পারে।
Advertisement

কেন এমন সন্দেহ তাঁর? পুলিশ সূত্রে খবর, তিনি পুলিশকে জানান, নিখোঁজের পরে বারবার তাঁরা দাদার বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রমিলা তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে দেননি। উল্টে ভাইয়ের নিখোঁজের জন্য তাঁদেরকেই দায়ী করে কুকথা শোনান।
এই সূত্র পেয়েই সক্রিয় হয় পুলিশ। সরাসরি হানা দেয় মহেশের বাড়িতে। বাড়ি ঢুকেই দুর্গন্ধ পান পুলিশকর্মীরা। কিন্তু সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও কোনও সূত্র পাচ্ছিলেন না। তবে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণের পর রান্নাঘরে ওই গন্ধের উৎস খুঁজে বের করেন তাঁরা। অমরকণ্টক থানার স্টেশন হাউজ অফিসার ভানুপ্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘গন্ধের উৎস নির্ধারণ করার পরেই আমরা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করি। শেষে রান্না করার স্ল্যাবের নীচেই মেলে মহেশের পচাগলা মৃতদেহ।’’
কিন্তু পুলিশের গোয়েন্দারাও কার্যত তাজ্জব বনে যান যে খুন করে রান্নাঘরের মধ্যে দেহ পুঁতে রাখা, সেখানে দিনের পর দিন রান্না করা এবং তার পরেও এক জন মহিলা এতটা নির্লিপ্ত ছিলেন কী ভাবে। শুধু তাই নয়, দেহ উদ্ধারের পরেও খুনের কথা কবুল করতে চাননি তিনি। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন। যদিও পরে পুলিশি জেরার মুখে তিনি খুনের কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি পুলিশের। খুনের ঘটনায় তাঁর ভাই গঙ্গারাম বানোয়াল তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বলেও মহিলার দাবি। যদিও গঙ্গারাম তা অস্বীকার করে পুলিশকে জানিয়েছেন, খুনের ঘটনার বিন্দু-বিসর্গও জানেন না তিনি।
কিন্তু কেন এমন কাণ্ড ঘটালেন প্রমিলা? পুলিশের দাবি, তিনি তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছেন, তাঁর ভাই গঙ্গারামের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর স্বামী রমেশের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সেই কারণেই তাঁরা দু’জন মিলে রমেশকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং সেই মতো কাজ হাসিল করেছেন।
কিন্তু এ ভাবে খুন করা এবং তার পরে রান্নাঘরের স্ল্যাবের নীচে পুঁতে দেওয়ার মতো কাজ যে এক জন মহিলার পক্ষে করা সম্ভব নয়, তা এক প্রকার নিশ্চিত পুলিশ। তাই তাঁদের সন্দেহ আরও এক বা একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল। গঙ্গারামের ভূমিকার পাশাপাশি আরও কেউ খুনে সাহায্য করেছিল কিনা, বা ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা— সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসাররা। আবার প্রমিলা ও রমেশের চার মেয়ে। তাঁরা কিছু জানতেন কিনা, সেই বিষয়টিও নজরে রয়েছে পুলিশের।

Find out more: