পরিসংখ্যান আইসিসির পক্ষে, তবে কি চারদিনের পথে টেস্ট ক্রিকেট
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে ক্রিকেট৷ সাদা পোশাকের লাল বলের খেলা এখন ফ্লাডলাইট আর চিয়ার লিডার্স ছাড়া ভাবাই যায় না৷ টেস্ট ম্যাচের চেয়ে এখন অনেক বেশি জনপ্রিয় ২০-২০ ওভারের খেলা৷ অনেক সময় খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধেও টেস্ট ক্রিকেটকে অবেহলা করার অভিযোগ ওঠে৷
এই পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালের একেবারে শেষে অভিনব একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল৷ আইসিসি পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচ থেকে একটা দিন ছেঁটে ফেলতে চায়৷ আর তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ কেউ কেউ টেস্ট ম্যাচের দিন কমানোর প্রস্তাবের বিপক্ষে৷ তো বর্তমান-প্রাক্তন বেশ কিছু ক্রিকেটারকে আবার আইসিসির পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে৷
এই প্রস্তাব রাখার সময় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা যুক্তি দেয় যে এখন অনেক টেস্টই তিন-চারদিনে শেষ হয়ে যায়৷ তাই টেস্ট ম্যাচ এখন থেকে অনায়াসেই চারদিনের করা যেতে পারে৷ কিন্তু পরিসংখ্যান কী বলছে? আইসিসির প্রস্তাবে কি আদৌ কোনও যুক্তি আছে?
২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে দেখা যাবে এই দশ বছরে ৪২.৭ শতাংশ বেশি টেস্ট ম্যাচ পাঁচ দিনে শেষ হয়েছে৷ আর চারদিন পর্যন্ত গড়িয়েছে ৪০ শতাংশ টেস্ট৷
এই দশ বছরে ৩৪৯টি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৪৯টি টেস্ট ম্যাচ পাঁচদিনে শেষ হয়৷ চারদিনেই শেষ হয়ে যায় ১৪০টি টেস্ট৷ ৫৮টি টেস্ট ম্যাচ শেষ হয় তৃতীয় দিনে৷ মাত্র দু’টি টেস্ট দু’দিনের বেশি গড়ায়নি৷
এই দশকে ভারত ৫৬টি টেস্ট খেলেছে৷ ২২টি ম্যাচ ভারত পাঁচ দিন পর্যন্ত খেলেছে৷ ২৩টি টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়েছে চারদিনেই৷ ১০টি টেস্ট তৃতীয় দিনেই শেষ হয়৷ একটি টেস্ট ভারত দু’দিনেই শেষ করে ফেলে৷
গত দশকে চারদিনেই যে ম্যাচগুলির ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে তার মধ্যে ভারত জিতেছে ৩৪টিতে৷ এই তালিকায় ভারতের স্থান দু’নম্বরে৷ প্রথমস্থানে ইংল্যান্ড৷ তারা ভারতের থেকে মাত্র দু’টি ম্যাচ জিতেছে৷
তবে চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে অন্য জায়গায়৷ দেখা যাচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে সময় যত এগিয়েছে, ততই পাঁচিদিনের আগেই টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে৷ সেই পরিসংখ্যান হল- ২০১৪-৩৪ শতাংশ, ২০১৫-৪০ শতাংশ, ২০১৬-৩৮ শতাংশ, ২০১৭-৪৯ শতাংশ, ২০১৮-৫৬ শতাংশ ও ২০১৯-৬৭ শতাংশ৷
ফলে বলা যেতেই পারে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার প্রস্তাবে একেবারে যুক্তিহীন নয়৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্যত্র৷ কারণ, অ্যাসেজ বা ভারত-অষ্ট্রেলিয়া বা অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজগুলিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়৷ প্রতিটি ম্যাচই পাঁচদিনে গড়ায়৷ সেক্ষেত্রে ওই সব সিরিজ আকর্ষণ হারাবে৷ তার কী হবে, এখন এ নিয়ে উত্তর মেলেনি আইসিসির তরফে৷