হায়দরাবাদ এফ সি--২     ইস্ট বেঙ্গল--০

(জেভিয়ার সিভেইরো, আরেন ডিসিলভা)

হায়দরাবাদ এফ সি-র কাছে ইস্ট বেঙ্গলের হারের মধ্যে কোনও অভিনবত্ব নেই। বিস্ময়ের কিছুও নেই। আই এস এল-এর দু নম্বর টিমের কাছে নয় নম্বর টিম হেরে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় সল্ট লেক স্টেডিয়ামে এই ম্যাচটার মধ্যে অন্য কিছু ছিল। সেই অন্য কিছু হল ম্যাচটাতে ইস্ট বেঙ্গল হারার মতো খেলেনি। নয় মিনিটের মধ্যে পিছিয়ে পড়ে ইস্ট বেঙ্গল শেষ ৪৫ মিনিট যা খেলল তাতে তাদের শূন্য হাতে ফেরার কথা নয়। ক্লেটন সিলভা, যিনি ৯টা গোল করে এখন যুগ্ম টপ স্কোরার, মিস করলেন দুটো ওপেন নেট, যেখান থেকে গোল না করাটা বিস্ময়ের। দু বারই সামনে শুধু গোলকিপারকে পেয়ে তিনি গোল করতে ব্যর্থ। একবার তাঁর প্লেসিং বাইরে গেল। আরেকবার হায়দরাবাদ গোলকিপার গুরমিত এক হাতে বাঁচালেন। এই দুটো ঘটনার মধ্যে যদি একটা থেকেও গোল হত, তাহলে ইস্ট বেঙ্গলের হার হয়তো হত না। এর সঙ্গে আরেকটা প্রয়োজনীয় তথ্য হল, যে ম্যাচে হায়দরাবাদ পরিষ্কার দু গোলে জিতল, সেই ম্যাচের সেরা হলেন তাদের সেন্টার ব্যাক নিম দোর্জি। একটা জয়ী দলের ফরোয়ার্ড কিংবা মিডফিল্ডার নয়, ম্যাচের সেরা যখন ডিফেন্ডার হন, তখন বোঝা যায় কী পরিমাণ চাপ তাঁকে এবং তাঁর ডিফেন্সকে নিতে হয়েছে। এবং শেষ পর্যন্ত তিনি হার মানেননি। পুরস্কার সে জন্যই। এবং এভাবেই পনেরো ম্যাচের শেষে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে হায়দরাবাদ দু নম্বর জায়গাটা ধরে রাখল। আর চোদ্দ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল পড়ে রইল সেই নয় নম্বরেই।

ঘরের মাঠে ইস্ট বেঙ্গল আগের ছয়টা ম্যাচে জিতেছে মাত্র একটা ম্যাচে। এই ম্যাচের শেষে সেটা সাত ম্যাচে একটা জয় হয়েই রইল। কিন্তু তা যাতে না হয় তার জন্য স্টিভন কনস্ট্যানটাইন টিমটাকে একটু অন্যভাবে সাজাতে চেয়েছিলেন। গোলে ফিরে এসেছিলেন কমলজিৎ সিং। খুবই ভাল খেললেন। অন্তত পাঁচটি অবধারিত গোল বাঁচিয়েছেন। না হলে ইস্ট বেঙ্গল আরও লজ্জায় পড়ত। রাইট ব্যাকে খেললেন মহম্মদ রাকিপ। এই প্রথম নামলেন। খুব বাজে বললে কম বলা হয়। বিরতির পরেই তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হল। সার্থক গোলুই যিনি লেফট ব্যাকে খেলছিলেন, তাঁকে রাইট ব্যাকে এনে জেরিকে নামানো হল লেফট ব্যাকে। নিজেদের নিয়মিত জায়গা পেয়ে দুজনেই ভাল খেললেন। সেন্টার ব্যাকে আগের কটা ম্যাচে খুবই খারাপ খেলেছেন ইভান গঞ্জালেস। এদিন তাঁকে বসিয়ে চুংগুঙ্গা লালের পাশে নামানো হল কিরিয়াকুকে। মাঝ মাঠে ভি পি সুহের, মোবাশির রহমান, জর্ডন ডোহার্টি এবং নাওরেম মহেশ সিং। সামনে অ্যালেক্স লিমা এবং ক্লেটন সিলভা। দল গঠনের মধ্যে একটু চিন্তার ছাপ আছে। কিন্তু সেটা মাঠে প্রয়োগ করতে হবে তো। নাওরম মহেশ এ বছর শুরুটা দারুণ করেও কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছেন। গোলের বল বাড়াতেন তিনি। যার থেকে ক্লেটন অনেক গোল করৈছেন। কিন্তু এডিন কী যে হল। মহেশ পুরো ফ্লপ। ডান দিকে সুহের প্রথমার্দ্ধটা রক্ষণেই কাটালেন। কিন্তু বিরতির পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে যখন তিনি পুরোপুরি আক্রমণে তখন ইস্ট বেঙ্গলেরও ঝাঁঝ বাড়ল। গোলের সুযোগও এল। কিন্তু গোল হল না।

হায়দরাবাদ শুরু থেকেই হারে রে রে করে অ্যাটাকে এল। এবং নয় মিনিটের মধ্যেই গোলটা পেয়ে গেল। বাঁ দিক থেকে সেন্টার করলেন বোর্জা হিয়েরা। সেই বল অনেকটা উড়ে এসে পড়ল জেভিয়ার সিভেইরোর মাথায়। ইস্ট বেঙ্গলের তিন ডিফেন্ডার, চুংগুঙ্গা লাল, কিরিয়াকু এবং সার্থক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন। বিনা বাঁথায় ঠান্ডা মাথায় হেড করে গোল করে গেলেন সিভেইরো। এর পর মিনিট দশেক ম্যাচটা হল কমলজিৎ বনাম হায়দরাদাদের মধ্যে। তাদের দুই সাইড ব্যাক নিখিল পূজারি এবং আকাশ মিশ্র ওভারল্যাপে গিয়ে একটার পর একটা বল রাখছিলেন মাঝখানে। এবং সেগুলোকে গোলের উপযোগী করে তৈরি করে দিচ্ছিলেন ওগবেচে। কিন্তু মহম্মদ ইয়াসির, হিতেশ শর্মা কিংবা রোহিত দানুরা গোল করতে ব্যর্থ হলেন মূলত কমলজিতের জন্য। মিনিট কুড়ি পর হায়দরাবাদের ঝড় থামলেও ইস্ট বেঙ্গল প্রথমার্দ্ধের বাকি সময়টা নিজেদের ঠিকমতো গুছিয়ে নিতে পারেনি। সেটা তারা পারল বিরতির পর। এই সময় মাঠে ইস্ট বৈঙ্গলের দাপটে হায়দরাবাদ খাবি খাচ্ছিল। নিম দোর্জি তো বটেই ওডেই ওনায়েনডিয়ারা লাল হলুদের আক্রমণের ঢেউ আটকাতে পারছিলেন না। গোল তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু দশ মিনিটের মধ্যে ক্লেটন বক্সের মধ্যে পর পর দুটো সুযোগ নষ্ট করে দলকে ডোবালেন।

হায়দরাবাদের দ্বিতীয় গোলটা সংযুক্ত সময়ের তিন অর্থাৎ ৯৩ মিনিটে। একটা সম্মিলিত আক্রমণ থেকে বক্সের ঠিক বাইরে বল এল ওগবেচের কাছে। পেরিফেরিয়াল আই দিয়ে তিনি দেখে নিয়েছেন বাঁ দিকে আরেন ডিসিলভা অনেকটা সুবিধেজনক জায়গায় রয়েছেন। কেউ কিছু বোঝবার আগেই তিনি ব্যাক হিল করে বলটা দিলেন আ্যারেনকে। কয়েক গজ দৌড়ে ডান পায়ের উঁচু শটে গোল করলেন মিনিট পনেরোর জন্য মাঠে নামা আরেন ডিসিলভা। ইস্ট বেঙ্গলের পক্ষে নক আউটে যাওয়ার আর কোনও সম্ভাবনাই রইল না। এখন দেখার হায়দরাবাদ লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হতে পারে কি না। লড়াই তাদের সঙ্গে মুম্বই সিটি এফ সি-র।

Find out more: