সাফ কাপের শুরু থেকেই ভারতই যেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলে। সেই ১৯৯৩ সালে যখন করাচিতে প্রথম সাফ কাপ হয়, তখনই ভারত হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। সব মিলিয়ে আটবার। মঙ্গলবার ভারত যদি কুয়েতকে হারিয়ে আবার চ্যাম্পিয়ন হয়, তবে সেটা হবে নয় নম্বর সাফল্য। আর এই প্রথম সার্ক গোষ্ঠীর বাইরে লেবানন এবং কুয়েত খেলছে এবারের টুর্নামেন্টে। তাই ভারত যদি শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়, তবে সেটা কিন্তু অন্য বারের চেয়ে বেশি কৃতিত্বের হবে।

ফিফা র‍্যাংকিংয়ে ভারত এখন ১০০, আর কুয়েত ১৪৩। এই পরিসংখ্যান দিয়ে কুয়েতকে মাপতে গেলে ভুল হবে। কুয়েত মধ্য প্রাচ্যের দল। তারা অতীতে বিশ্ব কাপ খেলেছে। ভারতকে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে দশ গোল দিয়ৈছে। তাদের ফিফা র‍্যাংকিংয়ে অবনতির কারণ হল মাঝে অনেক দিন তারা ফিফার নির্বাসনের আওতায় ছিল। তাই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেনি। র‍্যাংকিংয়ে তাই নেমে গেছে। কাগজে কলমে কুয়েতের র‍্যাংকিং যাই হোক না কেন তারা কিন্তু বেশ শক্তিশালী দল। সাফের গ্রুপ লিগ ভারতের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও তারা একেবারে শেষ দিকে গোল করে ম্যাচ ১-১ করেছে। তাই কুয়েতকে হারিয়ে সাফ কাপ জেতা ভারতের পক্ষে খুব সহজ হবে না।

ভারত অবশ্য এই মুহূর্তে খুবই ভাল জায়গায় আছে। ম্যাচের পর ম্যাচ জিতছে তারা। আন্তঃ মহাদেশীয় কাপ এবং সাফ কাপ নিয়ে টানা আটটি ম্যাচে অপরাজিত। এই আটটা ম্যাচে ভারত গোল খেয়েছে মাত্র একটি। তাই কুয়েতের বিরুদ্ধেও ভারতের পক্ষে বাজি রাখা যেতেই পারে। ভারতের ডিফেন্সের এক নম্বর প্লেয়ার সন্দেশ ঝিঙ্গন সেমিফাইনালে লেবাননের বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি। দুটো হলুদ কার্ড দেখায় তাঁকে বসতে হয়েছিল। ফাইনালে টিমে ফেরত আসছেন সন্দেশ। তাঁর পাশে আনোয়ার আলি দুর্দান্ত খেলছেন। সেমিফাইনালে সন্দেশ না থাকলেও মেহতাব সিংকে সঙ্গে নিয়ে তিনি লেবাননকে ১২০ মিনিট আটকে দিয়েছেন। দুই সাইড ব্যাক কে হবেন ? প্রীতম কোটাল--শুভাশিস বসু নাকি নিখিল পুজারী-আকাশ মিশ্র ? যারাই খেলুন না কেন ভারতের ব্যাক ফোর যথেষ্ট মজবুত। মাঝ মাঠে অনিরুদ্ধ থাপা একাই একশো। এই তরুণ ফুটবলার মাঠ জুড়ে খেলেন। সেট পিসেও তিনি দুর্দান্ত। কর্নার এবং ফ্রি কিক নেওয়ায় দক্ষতা আছে অনিরুদ্ধের। তাঁর পাশে জিকসন সিং, ছাংতেরা প্রতিদিনই উন্নতি করছেন। ছাংতে শুধু মাঝ মাঠেই নয়, উইং প্লে-তেও দুর্দান্ত। শুরু থেকে হয়তো খেলেন না, কিন্তু পরে নেমে নাওরম মহেশ সিং এবং উদান্ত সিং কিন্তু বিপক্ষের কাছে বেশ ভয়ের। ছাংতে, মহেশরা তো গোলও করছেন।

একই কথা যদি ভারতের দুই ফরোয়ার্ড আশিক কুরুনিয়ন এবং সাহাল আব্দুল সামাদ সম্পর্কে বলা যেত তাহলে ভাল লাগত। কিন্তু এই দুই ফ্রন্টলাইনার এখন পর্যন্ত নিজেদের ভূমিকায় সফল নন। কিন্তু তাদের দুর্বলতা ঢেকে দিচ্ছেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। ভারত অধিনায়ক ফুটবল জীবনের শেষ বেলায় রয়েছেন স্বপ্নের ফর্মে। ইতিমধ্যেই পাঁচটা গোল হয়ে গেছে তাঁর। টুর্নামেন্টের গোল্ডেন বুট তাঁর পাওয়া হয়েই গেছে বলা যায়। ফাইনালে জিততে গেলে তাঁর গোলের দিকে তাকিয়ে ভারত। সুনীল সেমিফাইনালে গোল পাননি। তবে টাই ব্রেকারে গোল করেছেন। ফাইনালের জন্য তিনি তাঁর গোলক্ষুধাকে জমিয়ে রেখেছেন। গোলে ভারতের দুই গোলকিপারই বেশ ভাল। গুরপ্রীত এবং অমরিন্দর চমৎকার ফর্মে আছেন। সেমিফাইনালে গুরপ্রীত টাই ব্রেকারে শট বাঁচিয়ে ভারতের জেতার ব্যাপারে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। ফাইনালে হয়তো তিনিই খেলবেন।

শেষ পর্যন্ত কুয়েতের বিরুদ্ধে ভারতের জেতা অসম্ভব নয়। তবে কঠিন, বেশ কঠিন। এখন দেখার ইগর স্টিমাকের ছেলেরা সেই কঠিন কাজটা করতে পারেন কিনা। ক্রোয়েশিবান কোচ অবশ্য মঙ্গলবারও ডাগ আউটে বসবেন না। শাস্তি স্বরূপ তাঁকে বসতে হবে গ্যালারিতে। তবে সহকারি কোচ মহেশ গাউলি দুটো ম্যাচে্ ভালভাবে দায়িত্ব সামলেছেন। মঙ্গলবার ভারতের মতো তাঁরও অগ্নিপরীক্ষা।

Find out more: