সাডেন ডেথে কুয়েতী অধিনায়ক ইব্রাহিমের শট বাঁ দিকে শূণ্যে শরীর ছুড়ে বাঁচিয়ে দিলেন গুরপ্রীত সিং। আর সঙ্গে সঙ্গে নয় বার সাফ কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল ভারত। আগের আট বারের তুলনায় এবারের সাফ কাপ একটু কঠিন ছি। কারণ এবার শুধু সার্ক গোষ্ঠীর দেশগুলোই নয়, ছিল পশ্চিম এশিয়ার লেবানন এবং কূয়েতও। সেই দুটি দেশকেই সেমিফাইনাল ও ফাইনালে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হল। দুটো ম্যাচেই ভারতের জয়ের নায়ক তাদের গোলকিপার গুরপ্রীত। ১২০ মিনিটে তিনি একটি গোল খেয়েছেন। কিন্তু টাই ব্রেকারে প্রথম এবং শেষ শটটি বাঁচিয়ে ভারতকে জিতিয়ে দিলেন। এবং এর ফলে পর পর তিনটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। মার্চ মাসে ইম্ফলে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট, গত মাসে ভুবনেশ্বরে আন্তঃ মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের পর মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরভা টুর্নামেন্টে সাফ কাপে। ভারতের কোচ ইগর স্টিমাক এদিনও ছিলেন গ্যালারিতে। ভারত জেতার পর তাঁকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালেন সমর্থকরা। টুর্নামেন্টের পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটি ম্যাচেই স্টিমাক ছিলেন গ্যালারিতে। সহকারি কোচ মহেশ গাউলি কিন্তু একবারও বুঝতে দিলেন না কোচের অনুপস্থিতিতে। এর আগে প্লেয়ার হিসেবে মহেশ ২০০৫ এবং ২০১১ সালে সাফ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এবার কোচ হিসেবেও সাফল্য পেলেন। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাঁর। ভারতের হয়ে টাই ব্রেকারে গোল করলেন সুনীল ছেত্রী, সন্দেশ ঝিঙ্গন, লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে, শুভাশিস বসু এবং মহেশ নাওরেম সিং। শুধু উদান্ত সিংয়ের শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
সকাল অনেক সময় বাকি দিনটা কেমন যাবে তার ইঙ্গিত দেয়। দিনটা ছিল ছাংতে-র। মিজোরামের এই উইঙ্গার দুপরেই পেয়েছেন সুসংবাদ। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন তাঁকে বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত করেছে। সন্ধ্যায় মাঠে নেমে পিছিয়ে থাকা ভারতকে তিনি সমতায় ফেরান। তারপর টাই ব্রেকারে গোল করে টিমকে জেতার ব্যাপারে সাহায্য করেন। সুনীল ছেত্রী দলের ক্যাপ্টেন। টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার। গোল্ডেন বুট পেলেন তিনি। কিন্তু এই ৩৮ বছর বয়সে পর পর তিনটি টুর্নামেন্টে টিমকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারতেন না যদি তাঁর তরুণ ব্রিগেড তাঁকে সাহায্য করতেন। মাঝ মাঠে অনিরুদ্ধ থাপা ও জিকসন সিং, উইঙ্গার ছাংতে, নাওরেম মহেশ সিং এবং উদান্ত সিংরা নিজেদের ভূমিকায় যদি সফল না হতেন তাহলে ট্রফি আসে না। এর সঙ্গে গোলকিপার গুরপ্রীত এবং সেন্টার ব্যাক সন্দেশ ঝিঙ্গনের কথাও বলতে হবে। এরাই আগামি দিনের ভারতের ভবিষ্যৎ।
ফাইনাল ম্যাচে এমনিতেই স্নায়ুর চাপ থেকে। এদিন যেন দু দলই স্নায়ুর চাপে বেশি ভুগেছে। ফাউলের পর ফাউল। এবং হলুদ কার্ডের পর হলুদ কার্ড। হলুদ কার্ড দেখতে হল কুয়েতের কোচ রুই ভেন্টোকেও যিনি পর্তুগাল জাতীয় দলে লুই ফিগোর সঙ্গে খেলেছেন। তো এত ফাউলের জন্যই হোক বা দু দলের টাইট ডিফেন্সের জন্যই হোক ম্যাচটা দেখার পক্ষে একেবারেই ভাল ছিল না। সারাক্ষণই বল এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে গেল বটে। কিন্তু ডিফেন্সের পাঁচিলে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এল। তবু ওরই মধ্যে প্রথমার্দ্ধেই হয়ে গেল দুটো গোল। ১৪ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে মাইনাস পেলেন কুয়েতের শাহবদ আল খালদি। সামনে শুধু গোল। গুরপ্রীতের কিছু করার ছিল না। ভারতের এই দলটা খুব একটা গোল খায় না। তবে গোল খেলেও কিন্তু খেই হারিয়ে ফেলে না। যেন কিছুই হয়নি এই মানসিকতায় ছাংতে, অনিরুদ্ধ থাপা, জিকসন সিংরা মাঝ মাঠটা ধরে খেলতে থাকেন। সুনীল এদিন একেবারেই তাঁর সেরা ফর্মের ধারে কাছে ছিলেন না। তবে অন্য দিনের চেয়ে সাহাল আব্দুল সামাদ এবং এবং আশিক কুরুনিয়ন একটু নড়াচড়া বেশি করেছেন। ৩৯ মিনিটে গোলটা শোধ করে ভারত। ডান দিক থেকে ভেসে আসা বল আশিক দেন সুনীলকে। তাঁর ফরোয়ার্দ পাস ধরে সামাদ চমৎকার মাইনাস করেন। বল যায় একেবারে ফাঁকায় দাঁড়ানো ছাংতের কাছে। গোল করতে ভুল হয়নি তাঁর।
সব মিলিয়ে একটা চমৎকার সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত। এখন বিশ্রাম। সেপ্টেম্বরে তাইল্যান্ডে কিংস কাপ। ভারতের সামনে বিদেশের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। দেখা যাক, ভারত শেই পরীক্ষায় উতরোতে পারে কি না। তবে আপাতত শুধু আনন্দ এবং উৎসব।