গোটা দেশ জুড়ে চলছে প্লাষ্টিক বর্জনের ডাক। চলছে প্রচার, মিছিল, সভাও। কিভাবে প্লাষ্টিক আমাদের জীবনে বিপদ ডেকে আনছে তা নিয়ে ক্রমাগতই বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু তারপরেও বাজারে প্লাষ্টিকের ব্যবহার কমেনি। সম্প্রতি বর্ধমানের পৌর উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যের নগরোন্নয়ণ দপ্তরের সচীব ড. সুব্রত গুপ্ত এব্যাপারে কার্যতই বিপদের ইঙ্গিত দিয়ে যান। তিনি জানান, মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে। তিনি জানিয়েছেন, বাজারে গেলে থলি নিয়ে যান। প্লাষ্টিক নেবেন না। অথবা এমন প্লাষ্টিক ব্যবহার করতে হবে যাকে বারবার ব্যবহার করা যায়। এভাবেই কমিয়ে আনতে হবে প্লাষ্টিকের ব্যবহার।

উল্লেখ্য, বর্ধমান পুরসভাও এই প্লাষ্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে কাজ শুরু করেছে। যদিও পুর এলাকার বাজারে দেদারই চলছে প্লাষ্টিক। মাঝে মাঝে প্লাষ্টিকের বিরুদ্ধে অভিযান করলেও ধারাবাহিকতার অভাবে তা বন্ধ হয়নি এখনও। এদিকে, সরকারী পর্যায়ে যখন প্লাষ্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য চলছে প্রচারাভিযান, তখন সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে এব্যাপারে অনেকদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মেমারীর পাল্লারোডের পল্লীমঙ্গল সমিতি। 

সম্প্রতি পল্লীমঙ্গল সমিতি প্লাষ্টিকের বদলে এক কেজি করে পিঁয়াজ দিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগও নেয়। আর এই কর্মসুচিতেই এখন পল্লীমঙ্গল সমিতির মাঠে প্লাষ্টিকের ডাঁই। কি হবে এতো প্লাষ্টিক? পল্লীমঙ্গল সমিতির সম্পাদক সন্দীপন সরকার জানিয়েছেন, অনেকদিন ধরেই তাঁরা প্লাষ্টিক বর্জনের ডাক দিয়ে সমিতির পক্ষ থেকে কাজ করছেন। এর আগে তাঁরা ঠিক এই সময় বড়দিন কিংবা ইংরাজী বছরের শেষ ও শুরুর দিনগুলিতে দামোদর নদের চড়ে যে পিকনিক পার্টি আসেন তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেছেন। পিকনিক পার্টির কাছে থাকা প্লাষ্টিক নিয়ে তার বদলে শালপাতা, কাগজের গ্লাস তুলে দিয়েছেন। এখনও চেষ্টা করে চলেছেন দামোদরের চড়ে চড়ে পিকনিক পার্টির ফেলে যাওয়া প্লাষ্টিককে কুড়িয়ে সেগুলিকে জড়ো করে নষ্ট করার। 

কিন্তু এতকিছু পরেও তাঁদের মনে হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে এব্যাপারে ব্যাপক সচেতনতা আনা জরুরী। তাই সম্প্রতি পিঁয়াজের অগ্নিমূল্যের সময় তাঁরা প্লাষ্টিক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে প্লাষ্টিকের বদলে এক কেজি করে পিঁয়াজ দিয়েছেন। সন্দীপনবাবু জানিয়েছেন, এই সময় ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় বর্ধমানের জামালপুরের ভুমিপুত্র বর্তমানে জার্মানির বার্লিনের বাসিন্দা রাজু হালদারের। তিনিই প্লাষ্টিকের রিসাইকিলিং তথা পুর্নব্যবহারের রাস্তা দেখান। কথা অনুযায়ীই কাজ। রবিবার খোদ রাজু হালদার এসে হাজির হলেন পল্লীমঙ্গল সমিতির মাঠে। একেবারে হাতে কলমে করে দেখালেন প্লাষ্টিকের পরিবেশ বান্ধব বিকল্প ব্যবহার।

 

প্লাস্টিককে উচ্চতাপে পাত্রের মধ্যে গলিয়ে তার সঙ্গে কেবলমাত্র বালি মিশিয়ে তৈরী করে দেখালেন ইঁট। আর এই প্লাস্টিক দিয়েই যা খুশী বানানো যায়। আর এদিন এই প্লাষ্টিকের ব্যবহার দেখে রীতিমত আলোড়ন পড়ে গেছে গোটা এলাকায়। উজ্জীবিত হয়েছেন ক্লাবের কর্মকর্তারাও। এখন তাঁরা বাণিজ্যিকভাবেই এই ইঁট তৈরী করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সন্দীপনবাবু জানিয়েছেন, এই ধরণের উদ্যোগ শুধু এই জেলাতেই নয় সম্ভবত রাজ্যে প্রথম। তিনি জানান, রাজু হালদার তাঁদের এব্যাপারে একটি মেশিনের পরিকল্পনা দিয়েছেন। খুব শিগগিরই তাঁরা ওই মেশিন বসাতে চলেছে। একটি প্লাষ্টিকের ইঁট তৈরী করতে ৫০০ গ্রাম প্লাষ্টিক প্রয়োজন হচ্ছে। খরচ পড়ছে ৩টাকার কাছাকাছি। যে মেশিন তাঁরা বসাতে চলেছেন তাতে প্রতিদিন ৭ হাজার এরকম ইঁট তৈরী করা যাবে। 

সন্দীপনবাবু জানিয়েছেন, এই ইঁট অন্য যে কোনো ইঁটের মতই। দীর্ঘস্থায়ী এবং ভূমিকম্প সহিষ্ণুও। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা চাইছেন সরকারীভাবে এই ধরণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে প্লাষ্টিককে বিনষ্ট করা সম্ভব হবে। সন্দীপনবাবু জানিয়েছেন, তাঁরা চাইছেন প্লাষ্টিক একবার ব্যবহারের পর সেগুলি ফের প্লাষ্টিকের আকারেই আবার বাজারে ফিরে আসে। তাঁরা বাজারে ফিরে আসাকেই আটকাতে চাইছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাণিজ্যিকভাবে তাঁরা এই ইঁট তৈরী ও বিক্রি করতে পারলে প্রতিটি ইঁট ৬ টাকা বা তার কাছাকাছি দামে বিক্রি করতে পারবেন। 

শুধু ইঁটই নয়, এই মণ্ড দিয়ে তৈরী হবে টাইলস্, ফুলের নানাবিধ টবও। যা পরিবেশ বান্ধবও। তিনি জানিয়েছেন, যে মেশিন তাঁরা বসাতে চলেছেন তাতে এই প্লাষ্টিক গলানোর জন্য কোনো ধোঁয়াও তৈরী হবে না। ফলে সেদিক থেকেও পরিবেশ নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকছে না। পাশাপাশি প্লাষ্টিক দিয়ে এভাবে ইঁট তৈরী করতে পারলে প্রতিদিনই টন টন পরিত্যক্ত প্লাষ্টিকের সদ্ব্যবহার হবে। তিনি জানিয়েছেন, মেশিন বসানোর পর তাঁরা এই পরিত্যক্ত প্লাষ্টিক কিনবেন। সেজন্য কিছু পরিকল্পনাও তাঁরা নিয়েছেন।

Find out more: