আর মাত্র হাতে গোনা একটা দিন বাকি, আকাশে বাতাসে পুজোর হাওয়া বইছে। ঢাক বাজছে মন্ডপে মন্ডপে। মহানগর থেকে মফস্বলে নানা রঙের আলোয় আলোকিত। তারই প্রাক্কালে ফুরসৎ নেই অভিনেত্রী টুম্পা পাল-এর। পুজোর মধ্যেও ধারাবাহিক চলচ্চিত্রের শ্যুটিং। সম্পূর্ণ হল না পুজোর শপিং। আড্ডা দিতে দিতে বিবিপি নিউজ-এর প্রতিনিধি হাবিবা রহমান-এর মুখোমুখি হয়ে জানালেন পুজোর পরিকল্পনা.....
প্রশ্নঃ পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে দেবী পক্ষ শুরু ... পুজো পুজো কলরব চারিদিকে কেমন লাগছে তোমার ?  
টুম্পাঃ পুজোর ছোঁয়া খুব ভালো মতোই লেগে গেছে কিন্তু কিছু করা যাচ্ছে না, যেহেতু প্রতিদিন আপাতত শুটিং আছে, সকালবেলা উঠে শুটিং যেতে হচ্ছে আবার রাত্রে দশটার সময় ফিরতে হচ্ছে, মন তো পুজো পুজো করছে, মনে হচ্ছে কাজবাজ ফেলে দিয়ে পুজোতে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি, কিন্তু সেটা তো করা যাচ্ছেনা আনফরচুনেটলি।
প্রশ্নঃ পুজোর শপিং শেষ ? 
টুম্পাঃ না এখন অব্দি কম্পিলিট হয়নি। টুকটাক শপিং করা হয়েছে, বাকিটা বাকি আছে । বাকিটা হবে কিনা তাও আদেও বলা যাচ্ছে না , কারণ ছুটি এখন পাওয়া যাচ্ছে না ২ অক্টোবর একটা ছুটি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি পাই তো নিশ্চয়ই যাব।
প্রশ্নঃ পুজোর প্ল্যান কি ? 
টুম্পাঃ পুজোর প্লান বলতে সেই রকম কিছু নেই। কাজ,পুজা ইনোগ্রেশন,ভুরিভোজ আর শুটিং। আপাতত একটা পুজো ইনোগ্ৰশন এর আমন্ত্রণ আছে, তারপরে দুদিন শুটিং , ষষ্ঠী তে পুজো পরিক্রমা আছে আর সন্ধ্যেবেলা আরেকটা পুজোর ইনভিটেশন আছে, সপ্তমী অষ্টমী নবমী ফ্যামিলি এন্ড ফ্রেন্ডস।
প্রশ্নঃ পূজার মধ্যে শুটিং ? 
টুম্পাঃ পূজার মধ্য শুটিং পড়ে গেল, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না ধারাবাহিকের। ওই ধারাবাহিককে বেসিক্যালি আমি একটা নেগেটিভ ক্যারেক্টার করছি যার নাম হচ্ছে লক্ষী। নায়ক-নায়িকা আর আমাকে নিয়ে তিনজনের গল্পটা শুরু। ক্যারেক্টার টা খুবই নেগেটিভ ও খুব মুডী কিন্তু খুব স্ট্রং ক্যারেক্টার। তো অভিনয় করতে খুব ভালোই লাগছে।
প্রশ্নঃ নেগেটিভ ক্যারেক্টার যদি পজেটিভ হত তো ব্যাপারটা কেমন হত ? 
টুম্পাঃ চরিত্র আমার কাছে হচ্ছে চরিত্র, সেটা নেগেটিভ কিংবা পজেটিভ, প্রত্যেকটা চরিত্রে একেকটা বৈশিষ্ট্য থাকে। যে রকম ক্যারেক্টার পাই সেটা কে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।
প্রশ্নঃ পুজোর ক'দিন কি ডায়েট চার্ট মেন্টেন হবে ? 
টুম্পাঃ দেখো যে কটা দিন আমার শুটিং চলছে, পূজোর মধ্যে সে কটা দিন ডায়েট চার্টে মেন্টেন করতে হবে। কিন্তু বাকি দিনগুলো সব 'চিট ডে' হিসেবে পালন করব। কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না, খাবারের সাথে বাকি দিনগুলোতে। এমনিতে আমি খুব ফুডী, খেতে খুব ভালোবাসি, আমার প্রত্যেকে সপ্তাহে একটা করে চিট ডে থাকে। পারলে সপ্তাহের তিন-চারটে আমি চিট ডে নিয়ে নিয়। কিন্তু পুজোতে তো পুরোটাই চিট ডে। পূজোতে একদিন পুরো কন্টিনেন্টাল আরেকদিন চাইনিজ আর একদিন পুরো বাঙালি। বাঙালি টা অষ্টমীতে, একদম পিওর বাঙালি খাবার।  সকালে অঞ্জলি বিকেলে ভুরিভোজ।
প্রশ্নঃ এই পূজোতে কোন স্পেশাল কিছু ? 
টুম্পাঃ আপাততো পুজোতে আমার স্পেশাল এটাই হচ্ছে, এটা তো আমার প্রথম প্রজেক্ট ,  আমি একটু আধটু মানুষের পরিচিতি পাচ্ছি, মানুষ ডাকছে, বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমাকে  আমন্ত্রণ করছে,এটা একটা নতুন আমার কাছে, ভালো লাগছে খুব ইনজয় করছি একচুয়ালি । দারুন লাগছে ।
প্রশ্নঃ ধারাবাহিকের ছোট পর্দা থেকে যদি টলিউডের বড় পর্দায় সুযোগ পাওয়া যায় তো কার সঙ্গে অভিনয় করতে ইচ্ছুক  ? 
টুম্পাঃ টলিউড এ আমি সবার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক কারণ প্রত্যেকেই খুব ভালো কাজ করে , প্রত্যেকের কাজে একটা আলাদা আলাদা ভ্যারিয়েশন আছে , যার সঙ্গেই কাজ করি না কেন আমি জানি তার থেকে আমি কিছু না কিছু শিখতে পারবো। প্রত্যেকের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আছে। টলিউডে আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে। আমার গুরুজন ,ভীষণ প্রিয় একজন মানুষ, কখন আমার পার্সোনালি ওনার সঙ্গে কথা হয়নি কিন্তু ওনার অভিনয় আমার প্রচন্ড ভালো লাগে।
প্রশ্নঃ সৌমিত্র চ্যাটার্জী বয়োজ্যেষ্ঠ ও  একজন অসাধারণ অভিনেতা, পাশাপাশি এখন নতুন যারা উঠছে 'ইয়ং সেন্সেশনস' অভিনেতা দের মধ্যে কাকে সবথেকে বেশি ভালো লাগে ?
টুম্পাঃ এইরে, পছন্দ আমার সবাইকেই , কিন্তু যেরকম ঋদ্ধির অভিনয় আমার খুব ভালো লাগে , ঋত্বিক গঙ্গুলি, যিনি পরিণীতা করল ওনার অভিনয় আমার বিশাল পছন্দের, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তো আছেনই। ও নিয়ে কোন কথাই হবে না, পরমব্রত আবির এদেরকেও আমার খুব পছন্দ।
প্রশ্নঃ বলিউডের পছন্দের অভিনেতা ? 
টুম্পাঃ বলিউডে ফেভারিট শাহরুখ খান, শাহরুখ খানের প্রচুর মুভি দেখছি  আমি,  এখনো দেখতেও ভালোবাসি, রণবীর সিং কে ভালো লাগে। একচুয়ালি কি বলতো অভিনয়টা তো খুব পছন্দের , এক একটা  মুভিতে দেখি একেক জন ব্রিলিয়ান্ট পারফরম্যান্স করছে , তো সেই ক্ষেত্রে আমি তখন তাদের ফ্যান হয়ে যাই। যেরকম আমার রাজকুমার রাও কে প্রচন্ড পছন্দ , ভিশন ভালো লাগে , তাছাড়া নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি কেউ ভালো লাগে ।
প্রশ্নঃ বেদের মেয়ে জোসনা শুটিং করতে গিয়ে, স্মরণীয় ঘটনা,বা এমন কোনো ঘটনা যেটা সারা জীবন মনে থাকবে ?
টুম্পাঃ এমন কিছু ঘটনা , হুম একটা ঘটনা আছে সেটা রিসেন্টলি আমার সঙ্গে ঘটেছে , সেটা হচ্ছে আমি একটা শর্ট দিয়েছিলাম তারপরে পুরো ফ্লোর হাততালি দিয়েছিল শর্ট টার জন্য। তো সেটা একটা স্মরণীয় ব্যাপার, তাছাড়া স্মরণীয় ঘটনা সেটা হচ্ছে, আমি এখন রুপম সিংহ, মোনালিসা পাল এদের সঙ্গে কাজ করছি তো ওদের সঙ্গে যখন প্রথম কাজটা শুরু করি , তো শুটিংয়ের প্রথম দিন টা আমার কাছে খুবই  ইম্পরট্যান্ট ডে ছিল ।
প্রশ্নঃ প্রথম শুটিং কবে শুরু হয়েছিল ? 
টুম্পাঃ এইরে তারিখ তো মনে নেই , আগে বললে মনে করে রাখতাম এটা, সম্ভবত তোমার ফেব্রুয়ারি 23 বা 24 তারিখে মনে হয় শুরু হয়েছিল , 22 তারিখ আমার লুক সেট ছিল এটুকুই আমার মনে আছে ।
প্রশ্নঃ আবার ফিরে আসি পুজোর প্লানে , দশমী , মানেই বরণডালা লাল পাড় শাড়ি সিঁদুর খেলা , ঢাকের শেষ কাঠি,  খুব একটা স্পেশাল দিন তো সেইদিনের প্ল্যান কি ? 
টুম্পাঃ দশমী টা আমার কোনদিনই পছন্দের নয়, ছোটবেলায় খুব কান্না কান্না পেত দশমী এলে , মা চলে যাবে।  দশমীতে আপাতত প্ল্যান হচ্ছে বাড়িতে কাটানো, বাড়ির লোকেদের সাথে। ওদেরকে তো সব থেকে কম সময় কারণ শুটিংয়ের কাজে এত ব্যস্ত থাকি, সুতরাং ওদের সঙ্গে কাটাব। আর আমার খুব খারাপ লাগে দশমী টা কেন ? মা চলে যাচ্ছে, তার উপর আমার ছোটবেলা থেকে খুব মনে হতো , সেটা হচ্ছে একেকজন শিল্পী তো বানায় দুর্গা প্রতিমা গুলো সেগুলো বিসর্জন যাবে , সেটা আমার দেখে খুব খারাপ লাগত । একটা মানুষ এত ধৈর্যের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে একটা মূর্তি বানাচ্ছে সেটা জলে চলে যাবে । সেটা খুব খারাপ লাগতো।
আরেকটা প্ল্যান আছে আমার যেটা আমি চাইছি পুরো করতে, ফতেমার সঙ্গে ‌দেখা করতে, ওয়ার্ল্ড ভিশন এনজিও আছে পার্ক সার্কাসে ওখানে থাকে, কিছু গিফটস নিয়ে ওর সঙ্গে একটু দেখা করতে যাওয়া , সেটা আমি জানিনা কতদূর হবে তবে একটা ইচ্ছা আছে ।
 আমার খুব ভালো লাগে, বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে, আমার ধারণা প্রত্যেকটা মানুষ যদি তাদের দ্বিতীয় সন্তানের বদলে একটা করে অনাথ বাচ্চা কে দত্তক নেয়, বোধ হয় তাহলে অনাথ আশ্রম গুলোর কোন প্রয়োজন থাকবে না ,সেজন্য করা। আমি হয়তো এই সময় দাঁড়িয়ে একটা বাচ্চাকে অ্যাডাপ্ট করে নিজের বাড়িতে রাখতে পারবো না, যদি এটা আইনত সম্ভব হতো আমি ডেফিনেটলি করতাম , সেহেতু আমি এনজিওর মাধ্যমে করেছি , যাতে আমি ওকে দেখাশুনা করতে পারি । সবার পুজো ভালো কাটুক। সবাই পুজোতে খুব মজা করুক এটাই চাই।


Find out more: