
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর বিরুদ্ধে কলকাতার রাজপথে আজ মিছিল কোনো দলীয় পতাকা ছাড়াই । পথে নামেলন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা । রাজনৈতিক দলের ডাকা মিছিল না হওয়া সত্ত্বে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জোরে আজকের মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অপর্ণা সেন-কৌশিক সেনদের সঙ্গে পা মেলান । কলকাতা ফের প্রমাণ করল ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে যে মহামিছিল হয়েছিল আজও কার্যত কলকাতায় তাহল । অমিল একটাই সেটা ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন , আর এটা স্বাধীন ভারতে নির্বাচিত এক সরকারের সংবিধান বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল । কলকাতা প্রমাণ করল ,প্রয়োজন হরে সিএএ ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে কুণ্ঠাবোধ করবে না ।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকেই রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ চলছে। ট্রেন–বাসে ভাঙচুর থেকে শুরু করে অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। হিংসার পথ থেকে সরে এসে পথে নেমে প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত তিন দিন ধরে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করেন মমতা। বহু মানুষ সেই মিছিলে অংশ নেন। এ বার পথে নামলেন বিশিষ্টজনেরাও
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিল করতে হবে, দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি করা যাবে না—স্লোগান উঠছে এ দিনের মিছিল থেকে। বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে বিশিষ্টজনেরা এই ইস্যুতে পথে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ দিন অপর্ণা সেন বলেন, “সারা দেশের মানুষ এই আইন মানছে না। ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষকে আঠার মতো জুড়ে রেখেছে। যত দিন না এই আইন বাতিল হবে এই আন্দোলন চলবে।’’
কৌশিক সেন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার চলছে। আমার তো মনে হয় লম্বা লড়াই চলবে। এটাতো ফ্যাসিস্ট সরকার, তাই খুব তাড়াতাড়ি লড়াই শেষ হবে না বলেই মনে হচ্ছে।” পথে নেমেছেন অভিনেতা ঋদ্ধি সেনও। তাঁর বক্তব্য, “দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। যাঁরা এই আইন মানছেন না, তাঁরা প্রতিবাদ করছেন। এই লড়াই চলবে।”
এ দিন দুপুরে মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে মিছিল শুরু হয়। এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলায় শেষ হয় মিছিল। প্রতিবাদ মিছিল কেন করতে দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অপর্ণা সেন। তিনি বলেন, “আমাদের কেন আন্দোলন করতে দেওয়া হবে না? কেন ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে? আন্দোলন চলবে।” দিল্লিতে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে আটক করারও তীব্র নিন্দা করেছেন অপর্ণা। এদিন জামিয়া মিলিয়া ও আলিগড়ের পড়ুয়াদের উপর পুলিশি নির্যাতনের সমালোচনা করা হয় । আন্দোলন করার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার বলে বুদ্ধিজীবীরা মন্তব্য করেন ।